একানডে [২]

না,

ক্ষান্তপিসির বর বাঁশি বাজাত না, পক্ষীরাজ ঘোড়াও ছিলনা তার, সে খালি ক্ষান্তপিসিকে বেদম ভালোবেসে যত্নে রাখত।

তারপর থেকে কি তোমরা সুখে শান্তিতে ঘর করছ?

নারে বাপ, আমাদের জীবনে সহজে সুখ শান্তি আসেনা। যুদ্ধে লেগে গেল যে। রানীর সাযেবদের সঙ্গে জর্মন আর কুৎকুতে জাপানি সাযেবদের। আমাদের পেটে কষি বাঁধতে হল।চডচডকরে দাম বাডছে সব কিছুর, কুমোর গিরি পোটোগিরিতে কি পেট চলে? আবার সেখেন থেকে কলকেতা- তোমাদের গড়িয়াহাট বাজার পেরিয়ে যে রেললাইন, সেখানে একটা বস্তিতে। বরটো কাজের আশায় চৌপর দিন টো টো করে ঘোরে। আমি বাসন মেজে কাগজ কেটে দুপয়সা কামাই। শেষ মেষ বর বালিগঞ্জ স্টেশনের রিংকুটমেন্ট আপিসে একটা পারটাইম কাজ পেল। মোট বওয়ার কাজ, বর্মাদেশে গিয়ে থাকতে হবে, তবে টাকাকডি ভালই দেয ওরা। আমি সে বস্তিতেই রযে গেলাম। সেখানে তোমার পিসি, করুণার সঙ্গে দেখা। সে আমায় জোর করে তোমার ঠাকুমার কাছে নিয়ে গেল। আমি কাজ শুরু করলাম। সোঁদরবনের লোক তো, আমরা পারিনা এমন কাজ নেই। তোমাদের পেছনের বারান্দায তার বেঁধে কাপড় মেলার জায়গা করা, তোমাদের কয়লা ভাঙা ঘরের সব কাজই তো আমিই করতাম। তোমার বাপ- জ্যেঠাও যে যুদ্ধে।

তাতে আমার একটা ভদ্রবাডির আশ্রয়ও হল, কিছু রোজগারের হল। তোমার ঠাকুমা, পিসি, জ্যেঠি আর মায়ের ভালবাসার পেলাম। অসুখবিসুখ করলে দাদু ওষুধ দিতেন। ঠিকানা দিয়ে বরকে চিঠি দিলাম। পল্টনে চিঠিতে আবার ঠিকানার সঙ্গে বরের নম্বর দিতে হয। দাদুর সেসব নিকে দিতেন। যুদ্ধে শেষ হবার মওকায তোমার বাপ ফিরে এল। আমার বরও ফিরল, তবে তার ছুটি হল আগ্রাতে, সেখান থেকে ট্রেনে আসতে কয়েকদিন লাগল।

এত কষ্টেও সেই সোনারপুরের ভাড়া বাডিটা ছাডিনি। সেখানেই থাকি এখন, আর ভাবি, একটা একানডে পোষা থাকলে আরও শিগ্গির ফিরতে পারত আমার বর। তোমার বাপের মত আকাশে উড়ে।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান